১০ একর জমির বিনিময়ে খুনি ভাড়া করে এক নারীকে হত্যা।
ভোলায় বিরোধপূর্ণ জমি দখলের জন্য প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজ গ্রুপের এক গৃহবধূকে মধ্যরাতে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ হত্যার জন্য ১০ একর জমির বিনিময়ে মো. ইব্রাহিম নামে এক খুনি ভাড়া করা হয়। হত্যার পর ওই গৃহবধূর বসতঘর পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে ফেলারও পরিকল্পনা করা হয়। তবে খুনিরা গৃহবধূকে হত্যার পর তাদের ব্যবহৃত ট্রলার ডুবে যাওয়ার কারণে বসতঘর পুড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন করতে পারেনি।
শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে ভোলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম তার সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক এক প্রেস বিফ্রিংয়ে এসব তথ্য জানান।
নিহত ওই গৃহবধূর নাম বকুল বেগম (৩২)। তিনি ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার দুলার হাট থানা সংলগ্ন মুজিব নগর ইউনিয়নের সিকদার চরের বাসিন্দা। হত্যার পরিকল্পনাকারী প্রধান দুই আসামি আব্দুল মান্নান (৪৮) ও আব্দুল মালেককে (৫২) গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পুলিশ সুপার এই ব্রিফিং করেন।
এসপি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দুই আসামি জানান, সিকদার চরের জমির মালিকানা নিয়ে দুটি গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছিল। একটি গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন স্থানীয় মেম্বার আব্দুল মালেক। বকুল বেগম নামে যাকে হত্যা করা হয় তার স্বামী বাচ্চু মালেক গ্রুপের লোক। আরেকটি গ্রুপ হলো আসলাম গ্রুপ। ঘটনার এক সপ্তাহ আগে তারা জনৈক সেলিমের বাসায় বসে পরিকল্পনা করে যে, চরের জমি দখল নেওয়ার জন্য একটি হত্যাকাণ্ড সংগঠিত করতে পারলে প্রতিপক্ষকে ফাঁসিয়ে দিয়ে তারা ওই জমি ভোগ করতে পারবে।
পুলিশ কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, এই পরিকল্পনা যেদিন নেওয়া হয় সেদিন উপস্থিত ছিলেন- গ্রেফতার মালেক মেম্বার ও মান্নান এবং অভিযুক্ত জসিম ও রফিক। তারা প্রাথমিকভাবে টার্গেট করে, চরের কাকে হত্যা করা যায়। তখন তারা বাচ্চুর স্ত্রী বকুল বেগমকে হত্যার টার্গেট নেয়। তার কারণ ছিল, ঘটনার দুই মাস আগে বকুল বেগমের সঙ্গে মালেক গ্রুপের প্রতিপক্ষ আসলাম গ্রুপের সঙ্গে একটি ঝগড়া হয় এবং এই ঝগড়ায় তারা বাচ্চুর স্ত্রীকে হুমকি দিয়েছিল। ওই দিনের ঘটনাটি অনেক মানুষের সামনে হয়েছিল।
এসপি বলেন, যার ফলে তারা যদি বাচ্চুর স্ত্রী বকুল বেগমকে হত্যা করে- তাহলে প্রতিপক্ষ আসলাম গ্রুপের ওপর দায় চাপাতে পারবে। যেহেতু স্থানীয় মেম্বার সে নিজে উপস্থিত থাকবে না। তার পক্ষে জনৈক ইব্রাহিম নামে একজনকে ভাড়া করে। যে ঢাকায় ট্রাক চালাতো। গত ২৮ নভেম্বর তাকে ঢাকা থেকে নিয়ে এসে পরিকল্পনাটি বুঝিয়ে দেওয়া হয় এবং বলে সে যদি পরিকল্পনা মতো কাজ করতে পারে তাহলে চরে ১০ একর এবং মান্নানকে পাঁচ একর জমি দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, অন্যদিকে মান্নান, ইতিমধ্যেই ৫২ লাখ টাকা সংগ্রহ করে মালেক মেম্বারকে দিয়েছে ওই চরের জমির বন্দবস্তের জন্য। মান্নান, ইব্রাহিম, সেলিম, জসিম ও রফিক সব মিলিয়ে পাঁচ জন হত্যা করবে বলে ঠিক করে এবং ২৯ নভেম্বর সন্ধ্যার দিকে সেলিম, আব্দুল মান্নানকে ১৫ হাজার টাকা দেয়। তারা সেই টাকা উঠিয়ে দুটি চাকু কেনে।
ঘটনার আগের দিন ইব্রাহিম, বাচ্চুর বাড়ি এবং ঘরে কয়জন থাকে তা দেখে আসে। মালেক মেম্বার মামলার হাজিরা দেওয়ার কথা বলে বাচ্চুকে তার সঙ্গে নিয়ে আসে এবং সেই সুযোগে বকুল বেগমকে হত্যার জন্য অন্যান্য সদস্যদের পাঠায়।
পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ২৯ নভেম্বর দিবাগত রাতে সেলিম তার ভাইয়ের ট্রলারে করে রাতে সবাইকে নিয়ে বাচ্চুর বাড়ি যায়। রফিক বাড়ির বাইরে পাহারা দেয়। জসিম নৌকায় অবস্থান করে। ইব্রাহিম এবং মান্নান সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে।
উল্লেখ্য, গত ২৯ নভেম্বর রাতের খাওয়া শেষে বসতঘরের সামনের বারান্দায় খাটের ওপর ঘুমিয়ে পড়েন বকুল। ওই দিন মধ্যরাতে আসামিরা (মুখ বেঁধে) ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাকে এলোপাতাড়িভাবে কুপিয়ে বুকে, পেটে, ডান ও বাম হাতে এবং বাম পায়ের হাঁটুর নিচে গুরুতর জখম করে। আসামিদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে বকুল বেগমের পেট থেকে নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে যায় এবং ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।