সরিষার বাম্পার ফলনের আশা

শীর্ষ নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

নীলফামারীতে ফসলের মাঠজুড়ে এখন সরিষার হলুদ ফুল। বিগত কয়েক বছরের চেয়ে জেলায় এবার সরিষার আবাদ বেড়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলনের আশা করছে কৃষি বিভাগ ও কৃষকরা।

জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, আমন ছাড়াও জমি থেকে সরিষা উঠার পর ওই জমিতে প্রচুর বোরোর আবাদ করা যায়। এতে কৃষি জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায় ও বোরোর ফলন ভালো হয়। এ বছর অধিক (উচ্চ) ফলনশীল আগাম জাতের সরিষার চাষ করছেন চাষিরা।

এর মধ্যে বারি-১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮ জাত চাষে কৃষক মাত্র ৭৫ থেকে ৮০ দিনের মধ্যে ফসল ঘরে তুলতে পারবেন। প্রতি হেক্টরে ফলন হয় দেড় হাজার কেজি (প্রায় সাড়ে ৩৭ মণ)। তবে স্থানীয় জাত টরি-৭ ফলন কম হয়, উৎপাদনের সময়ও বেশি লাগে। এ জন্য চাষ কমিয়ে দিয়েছেন অনেকে। বারি জাত ছাড়াও বিনা-৪, ৯ ও ১৭ জাতের সরিষার ফলন ভালো হয়।

এরপর বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উচ্চ ফলনশীল জাতের সরিষা বীজ উদ্ভাবন করায় বর্তমানে চাষের পরিমাণ বেড়েছে। এর মধ্যে বারি-১৪, ১৫, বিনা-৯/১৭, ৪ ও সোনালী সরিষা (এসএস-৭৫) উল্লেখযোগ্য।

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। এ পর্যন্ত অর্জিত জমির পরিমাণ হলো ৫ হাজার ৫৫৫ হেক্টর। এর মধ্যে সদরে দুই হাজার ৫৪৫ হেক্টর, সৈয়দপুর ২৭৫, ডোমার ৪৯০, ডিমলা ৮২০, জলঢাকা ৮৪৫ ও কিশোগঞ্জ উপজেলায় ৫৮০ হেক্টর। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৮৬০ মেট্রিক টন।

এই ফসল চাষে খরচ কম এবং লাভ বেশি। এতে সেচ দিলেও চলে না দিলেও ফসল কমে না। বর্তমানে বাজারে প্রতি মণ সরিষার দাম এক হাজার ৮০০ থেকে এক হাজার ৯৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

নীলফামারী সদরের রামনগর ইউনিয়নের বাহালী পাড়ার আমজাদ হোসেন, ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের কৃষক সফিউদ্দিন জানান, এক বিঘা জমিতে সরিষা আবাদে (হাল, বীজ, সার) খরচ হয় দুই হাজার ৪০০ থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। এতে অনেক লাভ হয়।

সফিউদ্দিন বলেন, এক বিঘা জমিতে সাত থেকে আট মণ সরিষা পাওয়া যায়। প্রতি মণ এক হাজার ৯০০ টাকা দরে আট মণের দাম দাঁড়ায় ১৫ হাজার ২০০ টাকা। আর বিঘায় খরচ বাদে লাভ হয় ১২ হাজার ৭০০ টাকা।

একই গ্রামের কৃষক সেকেন্দার আলী জানান, আমন ও বোরো চাষের মাঝখানে সরিষা চাষে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। বোরো ধানের ফলনও বেশি হয়। এ ছাড়া সরিষার ডাটা জ্বালানির কাজে ব্যবহার হয়।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান জানান, সরিষা চাষের পাশাপাশি মৌও চাষও করা যায়। এতে বাড়তি মুনাফা আসে। এবার সদরে ২ হাজার ৫৪৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে তা শতভাগ (২ হাজার ৫৪৫ হেক্টর) অর্জন সম্ভব হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. আবুবক্কর সিদ্দিক বলেন, এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অর্জন বেশি হয়েছে।

অল্প সময়ের মধ্যে অধিক ফলন পেতে কৃষি কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে কৃষকদের নানা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। আশা করি, ভালো ফলন ও বাজারে ভালো দাম পেলে কৃষকরা লাভবান হবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *