লাখো মানুষ প্রাণ বাঁচাতে ঘর ছাড়া

 

ইউক্রেনে মানবিক সংকট

বিবিসিতে কর্মরত ইউক্রেনীয় সাংবাদিক ওলগা মালচেভস্কা বৃহস্পতিবার রাতে ঘুম থেকে উঠে জানতে পারেন কিয়েভে তাঁর পরিবারের ফ্ল্যাটবাড়িতে বিমান হামলা হয়েছে। সেখানে তাঁর মা ও পরিবারের অন্য সদস্যরা বাস করেন।

রুশ আগ্রাসনের মুখে ইউক্রেনের শহর ছাড়ছে লাখো মানুষ। আশ-পাশের দেশগুলোতে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করছে তারা। বিমান হামলার নির্ঘুম রাত কাটছে তাদের। গতকাল শুক্রবারই রাজধানী কিয়েভে পৌঁছে যায় রুশ বাহিনী। সামরিকের পাশাপাশি অনেক বেসামরিক স্থাপনায়ও হামলা হয়েছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেন।

 

বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওলগা গতকাল শুক্রবার বলেন, ‘তিনি (ওলগার মা) অন্য জায়গায় আশ্রয় নিয়েছিলেন… এবং সৌভাগ্যক্রমে ওই ভবনে ছিলেন না। ’ ওলগা জানান, তাঁর মা, বোন ও শিশুসন্তান এক আত্মীয়ের বাসার বেইসমেন্টে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তবে তাঁর এক চাচাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, যিনি সম্ভবত ওই ভবনে ছিলেন।

 

বৃহস্পতিবার থেকে কিয়েভ ছাড়তে শুরু করে মানুষ। অনেকে বিমান হামলার ভয়ে মেট্রো রেলের স্টেশনে রাত কাটাচ্ছেন। অনেক শিশু, নারীসহ শরণার্থীরা পোল্যান্ডের রেলস্টেশনে রাত কাটিয়েছেন।

 

পোল্যান্ড সীমান্তে শরণার্থীদের একজন কিয়েভ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ৩৬ বছর বয়সী শিক্ষিকা ওলহা। পুরো নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ নারী বলেন, ‘আমি কিয়েভ থেকে এসেছি। আমি শুনেছি কিয়েভে আমার পাশের বাড়িতেই হামলা হয়েছে। আমি তাড়াতাড়ি জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছি। আমি প্রায় সবই আমার সঙ্গে নিয়েছি। ’

 

জন্মভূমি থেকে পালিয়ে আসার কয়েক ঘণ্টা পর ইউক্রেন সীমান্ত থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে পোল্যান্ডের এক সীমান্ত শহরের স্টেশনে পৌঁছান ওলহা। সেখানে ছিল আরো ২০০ জন আশ্রয়প্রার্থী। সেখান থেকে সুইজারল্যান্ডের এক বন্ধুর উদ্দেশে রওনা হয়ে ওলহা বলেন, ‘আমি এখন নিরাপদ বোধ করছি। কিন্তু আত্মীয় ও বন্ধুদের সাহায্য করতে পারিনি। তাদের অনেকেই বিপদে আছে, কিন্তু তারা দ্রুত চলে আসতে পারছে না। ’

 

সীমান্তে অবস্থানরত অন্য কর্মকর্তারা আশ্রয়প্রার্থী লোকদের নাম নিবন্ধন করছিলেন এবং টিকিট কাটতে সাহায্য করছিলেন। কনস্ট্যানটিন নামের এক ব্যক্তি বলছিলেন, বোমা হামলা এবং নানা ধরনের ‘খুব ভীতিকর জিনিস’ তাঁকে জন্মভূমি ছাড়তে বাধ্য করেছে।

 

পুরো নাম প্রকাশে অস্বীকৃতি জানানো এই ব্যক্তি বলেন, ‘আমি শুধু বন্ধুদের কাছ থেকে ভিডিও এবং বার্তা পেয়েছি। জার্মানিতে একজন বন্ধুর কাছে যাচ্ছি আমি। তারপর দেখা যাক কী হয়। ’

 

আশ্রয়প্রার্থী ৪২ বছর বয়সী ইরিনা নামের ব্যবসায়ী নারী রাশিয়ার এই আগ্রাসনকে ‘মানবতার বিরুদ্ধে একটি পদক্ষেপ’ আখ্যা দেন। তিনি বলেন, ‘আমার জীবন অর্ধেক দিনেই ১০০ শতাংশ বদলে গেছে। তবে এটা খুব ভালো লাগছে যে আমাদের কোথাও যাওয়ার জায়গা আছে। কিছু লোকের যাওয়ারও জায়গা নেই। ’

 

সূত্র : বিবিসি, এএফপি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *