বিশ্বকে চমক দেখিয়ে বাংলাদেশ এখন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে

বিশ্বকে চমক দেখিয়ে বাংলাদেশ এখন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে

রিপোর্টারঃ জীবন চন্দ্র রায়

বিশ্বকে চমকে দিয়ে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এখন স্বীকৃত। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অনেক রাষ্ট্রই বাংলাদেশের এই উত্থানকে অলৌকিক বা হিসেবে বিবৃত করছে। তবে অর্থনীতিবিদরা এর ব্যাখ্যা দিচ্ছেন অন্যভাবে। তারা মনে করছেন- সরকারের সঠিক নীতিমালা, সেই নীতিমালার ধারাবাহিকতা এবং ধারাবাহিকভাবে জনগণের জন্য সুযোগ সৃষ্টির কারণেই আজ বদলে গেছে বাংলাদেশ। দেশ থেকে ক্ষুধা-মন্দা-দারিদ্র্য দূর হয়েছে; অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে দেশের সাধারণ মানুষ, ফলে সার্বিকভাবে উপকৃত হচ্ছে রাষ্ট্র।

ভয়েস অব আমেরিকার কাছে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি নিয়ে নির্মোহ আলোচনা করেছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা ড. আখতার মাহমুদ। তিনি জানান, স্বাধীনতার আগে আমাদের সুযোগ ছিল না। স্বাধীনতার কারণে নিজেদের বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি হয়। বঙ্গবন্ধু সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি ব্যবস্থা প্রচলনের মাধ্যমে জনগণকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে চেয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু স্পষ্ট করে বলেছিলেন, অন্য কোনো দেশের মডেলে নয়, বরং বাংলাদেশের সমাজতন্ত্র হবে নিজস্ব স্টাইলে। বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ব্যাপারে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছেন- দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। মাঝখানে কিছু সময় প্রবৃদ্ধির গতি মন্থর হলেও, এখন কিন্তু সেই দিকেই ধাবিত হয়েছে বাংলাদেশ।

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই অর্থনীতিবিদ আরো জানান, ১৯৮৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর পুরো বিশ্ব মুক্তবাজার অর্থনীতির দিকে ঝুঁকে পড়ে। তখন বাংলাদেশকেও ধীরে ধীরে সেদিকেই যেতে হয়েছে। তবে ১৯৯১ সালেই কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠক করে

মুক্তবাজারভিত্তিক অর্থনীতির মাধ্যমেও কীভাবে সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক বিকাশ ঘটানো যায়, বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার বৈঠক করেন শেখ হাসিনা। ওই সময় তিনি বারবার জানতে চেয়েছিলেন -কীভাবে মুক্তবাজার অর্থনীতির ভেতরেও প্রান্তিক ও সাধারণ মানুষকে সুযোগ দেওয়ায় পথ বের করা যায়।

বর্তমানের বদলে যাওয়া বাংলাদেশের বিষয়ে ড. আখতার মাহমুদ বলেন, বাংলার মানুষ উদ্যমী। সুযোগ পেলে কাজে লাগাতে পারে। গত একযুগ থেকে সরকারের নীতিমালার ধারাবাহিকতার কারণে অনেক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বাংলার মানুষের জন্য। সরকার জনগণের উদ্যমী শক্তিকে বিকশিত করার সুযোগ করে দিয়েছে। ফলে মানুষ নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করতে পেরেছে। যার কারণে, সার্বিকভাবে পুরো দেশের অবস্থা বদলে গেছে।

অর্থনীতিবিদদের মতে বদলে যাওয়া বাংলাদেশের মূল কারণ হলো সরকারের নীতির স্থিতিশীলতা ও ধারাবাহিকতা, এবং এর কারণে মানুষের জন্য সৃষ্ট বহুমুখী সুযোগ- যা ব্যবহার করে মানুষ নিজের তথা দেশের অর্থনৈতিক পরিবেশ পরিবর্তন করতে পেরেছে।

এমনকি কোভিডের কারণে সারা বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রের জিডিপি যখন কমে গিয়েছিল, তখনও যে কয়েকটি রাষ্ট্র নিজেদের অর্থনীতি ধরে রাখতে সমর্থ্য হয়েছিল বাংলাদেশ তাদের মধ্যে অন্যতম। এবিষয়ে এই অভিজ্ঞ অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘ ২০২০ সালে আমাদের জিডিপি প্রায় আড়াই শতাংশ বেড়েছিল, যেখানে ভারতের ১০ শতাংশ কমে গিয়েছিল। এবং ২০২১-২২ অর্থবছরের বিষয়ে, শুরুতে বিশ্বব্যাংকের প্রজেকশন ছিল- বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হয়তো ৫.১ শতাংশ বাড়বে, তবে সম্প্রতি তারা সেই প্রজেকশনটি বাড়িয়ে ৬.৪ পর্যন্ত নিয়ে গেছে। অতএব নানান হিসেবে কিন্তু আমরা দেখছি- বর্তমানে যে অর্থনৈতিক উন্নতি, প্রবৃদ্ধি,

সেটি কিন্তু অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি।’

বাংলাদেশের উৎপাদন গত এক যুগে অনেক বেড়েছে, যা আমাদের অর্থনীতিকে বদলাতে অনেক সহায়তা করেছে। তবে বিভিন্ন খাতে আরো উৎপানশীলতা বৃদ্ধির সুযোগ আছে। যদি আগামী কয়েকবছর বহুমুখী খাতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা যায়, তাহলে শুল্কমুক্ত বা কম শুল্কে বাণিজ্য করলেও বাংলাদেশের ক্ষতি হবে না, বরং চলমান অর্থনীতি আরো শক্তিশালী হবে। স্বল্পউন্নত রাষ্ট্র থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের কারণে, বাংলাদেশের পরবর্তী অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটের বিষয়ে এই পরামর্শ দেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা ড. আখতার মাহমুদ।

অর্থনৈতিক সুযোগগুলো দেশের সাধারণদের কাছে পৌঁছানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শিতার কথা উল্লেখ করেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, ‘বাজারভিত্তিক অর্থনীতির দিকে গেলেও, দেশের গরিব মানুষ যাতে বাদ না পড়ে, তারা যাতে পিছিয়ে না যায়- সেজন্য কী করণীয়, সে ব্যাপারেও শেখ হাসিনা সচেষ্ট। তাই আমি অর্থনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে বলছি- তিনি (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) একটি ব্যালেন্স করার চেষ্টা করছেন। মূলত, বাজার অর্থনীতি খুব শক্তিশালী, উদ্যমী শক্তিকে বিকশিত হওয়ার সুযোগ করে দেয় এই অর্থনীতি। সেই সঙ্গে প্রান্তিক ও সাধারণ মানুষকে দেখে রাখার এবং তাদের জন্য সুযোগ তৈরি করার যে তাগিদটা আছে- এই দুটোর মধ্যে ব্যালেন্স করা দরকার আর সেটাই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করছেন ।’

নিয়মিত আপডেট পেতে
শীর্ষ নিউজ ২৪ এর সঙ্গে থাকুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *