পলাশবা‌ড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সঙ্কটে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত

পলাশবা‌ড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সঙ্কটে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত

মতিন মোহাম্মাদ পলাশবাড়ী, গাইবান্ধা:শীর্ষনিউজ ২৪.কম

পলাশবা‌ড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংক‌টে, স্বাস্থ‌্য সেবা ব্যাহত হচ্ছে। বি‌শেষ ক‌রে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাকর্মী সঙ্কট চর‌ম আকার ধারণ করেছে। মাত্র তিনজন প‌রিচ্ছন্নতা কর্মী দি‌য়ে চল‌ছে হাসপাতালটির প‌রিস্কার প‌রিচ্ছন্নতার কাজ। যার মধ্যে ২ জন সরকারি ভাবে এবং ১ জন আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত। এমতাবস্থায় চিকিৎসা সেবা প্রায় ভেঙ্গে পড়েছে।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে হাসপাতালে ঢুকতেই নাকে উৎকট গন্ধ লাগে। পানির ট্যাঙ্ক দীর্ঘদিন ধরে পরিষ্কার না করায় পানিবাহিত রোগব্যাধি বংশ বিস্তার করেছে। বাথরুম প্রায় ব্যবহার অনুপযোগী। ফলে চিকিৎসা সেবা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। হাসপাতালের চারপাশ ঘিরে গরু, ছাগল আর ময়লা-আবর্জনার স্তূপ চোখে পড়ার মত।

৩০ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হওয়া পলাশবা‌ড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে প্রতিদিনই শত শত রোগী আসেন চিকিৎসা সেবা নিতে।

উপজেলার ১‌টি পৌরসভাসহ ৮টি ইউনিয়নের প্রায় ৩ লক্ষাধিক মানুষ চিকিৎসা সেবার জন্য এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওপর নির্ভরশীল।

এ উপজেলার অধিকাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বাস করেন। প্রতিদিন স্বল্প আয়ের মানুষেরা এ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকেন। তাদের চিকিৎসার জন্য একমাত্র ভরসা এ হাসপাতালটি। বিগত সময়ে বিভিন্ন কারণে হাসপাতালটিতে অচলাবস্থা তৈরি হলে বর্তমান স্থানীয় সাংসদ এ‌্যাডঃ উ‌ম্মে কুলসুম স্মৃ‌তি এম‌পির প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ইউএইচএফপিও,

আরএমও, চিকিৎসক এবং সিনিয়র স্টাফ নার্সসহ অন্যান্য কর্মচারীদের আন্তরিক সেবাদানের প্রচেষ্টায় জনগণের মাঝে আস্থা ফিরে এসেছিল। কিন্তু বর্তমানে জনবল সংকটের কারণে এই হাসপাতালটিতে চিকিৎসা সেবার সাথে সংশ্লিষ্টরা স্বাস্থ্য সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।এমন অবস্থায় সেবা নিতে এসে হতে হয় নাজেহাল আর ভর্তি হওয়া রোগীরা পড়েন চরম ভোগান্তিতে।

পলাশবা‌ড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে সরেজমিনে দেখা যায়, ৫০ শয্যার এই হাসপাতালটিতে ওয়ার্ডবয়,ক্লিনার, প‌রিচ্ছন্নকর্মীর ২০/২১জনের স্থ‌লে মাত্র ৫ জন জন প‌রিচ্ছন্ন কর্মী কাজ কর‌ছে। যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে সেগুলো জমে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। এতে করে দূষিত হয়ে পড়ছে হাসপাতালসহ ও আশপাশের পরিবেশ।

হাসপাতালের গে‌টের সামনে সব সময় ভাড়ায় চালিত গাড়ি দিয়ে ভর্তি থাকে। হাসপাতালের ভেতর ঢুকলেও চোখে পড়ে নোংরা, আবর্জনা। টয়লেটগুলো, এমনকি রোগীদের শয্যাও পরিস্কার করা হয় না ঠিকমত।

ছয় দিন যাবৎ হাসপাতালে ভর্তি থাকা নাম প্রকা‌শে অ‌নিচ্ছুক এক রোগী বলেন, হাসপাতালে দুর্গন্ধে থাকা যায় না। টয়লেট নোংরা, বেড নোংরা। ভর্তি থাকা আরেক রোগী বলেন, ‘আমি দুই দিন ধইরা হাসপাতালে ভর্তি আছি। এ পর্যন্ত একবার ডাক্তার পাইছি, টয়লেটে যাওয়া যায় না দুর্গন্ধের কারণে। ফ‍্যানগুলো নষ্ট হইয়া আছে, গরমে থাকা যাইতাছে না। সুস্থ হইতাছি নাকি অসুস্থ হইতাছি বুঝতেছিনা।’

এ বিষ‌য়ে সত‌্যতা স্বীকার ক‌রে আবা‌সিক মে‌ডি‌কেল অ‌ফিসার (আরএমও) ডাঃ রাহাত আল রা‌জিব ব‌লেন, আমা‌দের প‌রিচ্ছন্ন কর্মীর চরম সংকট আ‌ছি। মাত্র তিজন প‌রিচ্ছন্নকর্মী দি‌য়ে চল‌ছে হাসপাতাল‌টি। যেখা‌নে প‌রিচ্ছন্নকর্মী,ওয়ার্ডবয়, ক্লিনারসহ ২০ জ‌নের অ‌ধিক জনবল থাকার কথা সেখা‌নে মাত্র ৫ জন আছে। এ‌তে স্বাস্থ‌্যসেবা দি‌তে সমস‌্যা হ‌চ্ছে। এছাড়াও অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার অবসরে যাওয়ার ফ‌লে ড্রাইভার না থাকায় রোগী আনা নেয়ার কা‌জে সমস‌্যা হ‌চ্ছে।

এ বিষ‌য়ে উপ‌জেলা স্বাস্থ‌্য ও প‌,প, কর্মকর্তা ডাঃ আ‌নিছুর রহমান ব‌লেন, দীর্ঘ‌দিন থে‌কে ক্লিনার,ওয়ার্ডবয় ও প‌রিচ্ছন্নকর্মী সংক‌টে আ‌ছি। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ‌কে অবগত ক‌রে‌ছি। আশা ক‌রি দ্রুত সমস‌্যার সমাধান হ‌বে।

পলাশবা‌ড়ি উপ‌জেলা নির্বাহী অ‌ফিসার মোহাম্মদ কামরুজ্জামান ব‌লেন, বিষয়‌টি দুঃখজনক, মানুষের চিকিৎসা পেতে দ্রুত জনবল বাড়া‌নো দরকার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *