ধাপে ধাপে যেভাবে দূর করবেন অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা ?

ধাপে ধাপে যেভাবে দূর করবেন অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা ?

কথায় আছে, চিন্তাবিহীন কার্য নাকি ডেকে আনে বিপদ। তাই ‘অতিরিক্ত চিন্তা’য় অনেকে মানসিক সমস্যায়ও পড়েন। ‘বেশি চিন্তা’ মন আর শরীরের মধ্যে তৈরি করে ভারসাম্যহীনতা।

অতীতের কোনো ঘটনা নিয়ে হয়তো আপনার মাঝে আক্ষেপ কাজ করছে। তাই মনে হতে পারে যদি এমনটা না করে এমনটা করতাম কিংবা পূর্বের কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে আজও হিসেব কষে যাওয়াকেই এক কথায় অতিচিন্তা কিংবা অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে।

 

বিশেষজ্ঞরা বলেন, অহেতুক দুশ্চিন্তা অনেকটা চক্রের মতো। যত দূর করতে চাইবেন, তত আপনাকে জেঁকে ধরবে। কথায় আছে, ‘অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা’ মস্তিষ্ক যত অলস বসে থাকে, তত মাথায় জমা হয় অহেতুক চিন্তা। করোনা মহামারির সময়ে বাসায় বসে থাকতে হচ্ছে কমবেশি সবাইকে। আর সে সময়েই মাথায় জমা হচ্ছে হাজারো দুশ্চিন্তা।

 

ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগানের করা এক গবেষণা অনুযায়ী, ২৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী প্রায় ৭৩ শতাংশ মানুষ এই কাজ করে থাকেন। ৪৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে সেই সংখ্যা কমে আসে ৫২ শতাংশে। মজার ব্যাপার হলো এদের অনেকেই মনে করেন অতীত হাতড়ে বেড়ানোর মাধ্যমে তারা নিজের জন্য ভালো কিছু করছে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ঘটনাটা উল্টো।

অহেতুক দুশ্চিন্তায় কী হয়: অহেতুক দুশ্চিন্তার সূচনা হতে পারে যেকোনো জায়গা থেকেই। আর তার প্রভাব পড়ে দৈনন্দিন জীবনে। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগে ভুক্তভোগী ব্যক্তির মন ও শরীর সব সময় ‘টেনসন্ড’ থাকে বলে শরীর ও মন যাতে রিলাক্সড থাকে, সেটা চেষ্টা করা উচিত। নিয়মিত ব্যায়াম করুন অথবা প্রতিদিন অন্তত ৪০ মিনিট দ্রুত হাঁটুন। দেখবেন আপনার শরীর ও মন কিছুদিন পরে অনেক রিলাক্সড বা শান্ত বোধ করবেন।

 

ঘুম কমে যাওয়া: অহেতুক দুশ্চিন্তার কারণে সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়ে ঘুমে। ঘুমানোর জন্য প্রয়োজন হয় একটি শান্ত মন। আর সে সময়ে যদি দুশ্চিন্তা হানা দেয়, তবে কি আর ঘুম আসে? রাতের ঘুমে বড় প্রভাব ফেলে অহেতুক দুশ্চিন্তা।

 

অলসতা বেড়ে যাওয়া: দুশ্চিন্তা একবার শুরু হলে চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ে। আর সে চিন্তা শেষ না করে কোনো কাজে মন দেয়াও সম্ভব হয় না। ফলে হয়তো ভেবে রেখেছেন এক ঘণ্টা পর কোনো কাজে বসবেন, অহেতুক দুশ্চিন্তা সে কাজকে পিছিয়ে দেবে আরও কয়েক গুণ।

 

খাওয়া রুচি কমে যাওয়া: মানুষ ভেদে এক্ষেত্রে প্রভাব ভিন্ন। দুশ্চিন্তায় কারও খাওয়া বন্ধ হয়, কারও আবার লাগামহীন হয়ে যায়। খাওয়ার ব্যাপারটা দুশ্চিন্তা থেকে সামান্য অন্যমনস্ক করে যা স্বস্তিদায়ক। আর এসময় মানুষ বেছে নেয় সবচাইতে সুস্বাদু কিন্তু অস্বাস্থ্যকর খাবারটাই। প্রক্রিয়াজাত চর্বি, চিনি ইত্যাদি অস্বাস্থ্যকর উপাদানে ভরপুর খাবারগুলো ‘কমফোর্ট ফুড’ হিসেবে হয়ত একারণেই খ্যাত।

 

সমস্যার সমাধান খুঁজুন: বারবার একই সমস্যার কথা না চিন্তা করে সমাধানের পথ খুঁজুন। সমস্যার কথা ভেবে কখনো সমাধান আসে না। বরং যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে, ভেবে সমাধান নিয়ে ভাবলেই বরং চিন্তামুক্ত হওয়া সহজ। সমস্যা কখনো মানসিক প্রশান্তি আনতে পানে না। তাই সমস্যা থেকে দ্রুত পরিত্রাণের উপায় বের করতে হবে।

 

নিজের জন্য সময় বরাদ্দ রাখুন: অহেতুক দুশ্চিন্তা নিজের স্বাভাবিক কাজ থেকেই দূরে সরিয়ে দেয় সবাইকে। নিজের কাজেই মনোযোগ দেয়া সম্ভব হয় না। যে কারণে সবকিছু বাদ দিয়ে পুরোনো কিছুতে ফিরে যান। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেয়া, মুভি দেখা, ছবি আঁকা বা বই পড়া; যেসব শখ বহু বছর আগে আপনার ছিল, সেটিতে মনোযোগ দিন কিংবা নতুন করে শুরু করুন। নিজের প্রিয় কাজে ব্যস্ত থাকলে আস্তে আস্তে নিজের মধ্যে হারানো আত্মবিশ্বাসও ফেরত পাবেন।

 

আবেগ নিয়ন্ত্রণ করুন: অনেক সময়ই অহেতুক দুশ্চিন্তা মানসিক চাপের সৃষ্টি করে, যা থেকে খিটখিটে মেজাজ কিংবা রেগে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে। তখন সে রাগ গিয়ে পড়তে পারে নিরীহ কারও ওপর। সে কারণে এ সময়ে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে শিখুন। নইলে সামান্য রাগ হতে পারে আপনার অন্য কোনো সময়ের দুশ্চিন্তার কারণ।

অতীতকে অতীতের জায়গায় থাকতে দিন: যখনই মনে হবে অহেতুক চিন্তা নিজের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে, দীর্ঘ একটা শ্বাস নিয়ে ভাবুন, ‘যা হয়েছে ভালোর জন্যই হয়েছে।’ অতীতকে চাইলেও পরিবর্তন করা সম্ভব নয়, ফলে ওসব নিয়ে ভেবেও লাভ নেই। অতীতকে অতীতের জায়গায় থাকতে দিলেই বরং সবার জন্য ভালো। এই চিন্তা নিয়ে নতুন করে কাজ শুরু করুন, তবেই এই দুষ্টচক্র থেকে বের হওয়া যাবে।

 

মনে রাখবেন, দুশ্চিন্তা মানুষের স্বাভাবিক চিন্তাধারারই বহিঃপ্রকাশ। দুশ্চিন্তা করাও দোষের কিছু নয়, কিন্তু এই দুশ্চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার দায়িত্ব আপনারই। খেয়াল রাখবেন, দুশ্চিন্তাকে যেন আপনি নিয়ন্ত্রণে রাখেন, দুশ্চিন্তা যেন আপনার জীবন নিয়ন্ত্রণ না করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *