গাজীপুরে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য অধিগ্রহণ কৃত জমিতে রাতারাতি উঠছে দালান কোঠা

গাজীপুরে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য অধিগ্রহণ কৃত জমিতে রাতারাতি উঠছে দালান কোঠা

আব্দুস সালাম রানা নির্বাহী সম্পাদক শীর্ষ নিউজ ২৪ডটকম

গাজীপুরের কাপাসিয়ার টোক বাইপাসে সড়ক ও জনপথ উন্নয়নে জমি অধিগ্রহণের প্রাথমিক নোটিশেই হুমরি খেয়ে পড়েন দালাল চক্র। গাজীপুর সড়ক ভবনের সার্ভেয়ার জাহিদ হাসান, এলএ শাখার সার্ভেয়ার মনিরুল ইসলাম ও গাজীপুর সদর ইউএনও অফিসের স্টাফ নয়ন মিয়া স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে চুক্তি ভিত্তিক স্থাপনা নির্মাণে ইনভেস্ট করেন মোটা অংকের টাকা। ইনভেস্ট পাকাপোক্ত করতে সীমানা নির্ধারণ করে গেছেন এলএ শাখার সার্ভেয়ার মনিরুল।

দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন ও অবকাঠামো নির্মাণের লক্ষ্যে সরকার জমি অধিগ্রহণ করেন। অফিস-আদালত, শিল্প-কারখানা, দালান-কোঠা, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, সড়ক-সেতু কিংবা বেসরকারি পর্যায়েও বিভিন্ন উন্নয়নমূল কর্মকাণ্ডে জমি অধিগ্রহণ করা হয়।

উল্লেখ আছে স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল আইন-২০১৭ ধারা (১৩) অনুসারে ধর্মীয় উপাসনালয়, কবরস্থান ও শ্মশান অধিগ্রহণ করা যাবে না।

জানা গেছে, ঢাকা – কিশোরগঞ্জ মহাসড়ক উন্নয়নে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার টোক বাইপাস এলাকায় জমি অধিগ্রহণের লক্ষ্যে প্রাথমিক নোটিশ জারি করা হয়েছে। এতে অনেকটাই দিশেহারা হয়ে পাড়েন জমি মালিকেরা।

অধিক ক্ষতিপূরণ পাওয়ার লোভে অধিগ্রহণ ভূক্ত জমির নালা, ডুবা বড়াট করে স্থাপনা নির্মাণে চলেছে তোড়জোড়। জমির মালিকদের সাথে এবং অধিগ্রহণ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে স্থানীয় একটি দালাল চক্রের শালা পরামর্শে পরিকল্পনামাফিক চুক্তি ভিত্তিক সিমেন্ট-বালুর প্লাস্টারে কয়েকটি মাটির ঘর পাকা ঘরে রুপান্তর করা হয়েছে, যা এখনো দৃশ্যমান রয়েছে।

বাইপাস মোড় এলাকার অধিগ্রহণের আওতায় একাধিক জমি ও স্থাপনা মালিকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অধিগ্রহণ মর্মে ৪ ধারায় প্রাথমিক নোটিশ জারির পর থেকেই দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য বাড়ে গেছে। দালাল চক্রটি চুক্তি ভিত্তিক ৪৫% হাতিয়ে নিতে স্থাপনা নির্মাণে মোটা অঙ্কের অর্থ ইনভেস্ট করছেন।

কোনো খরচ ছাড়াই ৫৫% পাবেন জমি ও স্থাপনা মালিকেরা। এমন অফারে নালা,ডুবা ভরাট ও নতুন স্থাপনা নির্মাণের জন্য নগদ অর্থ পেয়ে বিদ্যুৎ গতিতে চলছে স্থাপনা নির্মাণের কাজ।

তাদের নিয়োগ প্রাপ্ত স্থানীয় দালাল রিয়াজ উদ্দিন মেম্বার জানান, একটা নোটিশ পেয়েছি, এখন কোনো খবর নেই।গাজীপুর সড়ক ভবণের সার্ভেয়ার জাহিদ হাসান ও এলএ শাখার মনিরুল ইসলাম, গাজীপুর সদর ইউএনও অফিসের নয়ন মিয়া, রফিক ও মৃধা।

তাদের সমন্নয়ে চুক্তিতে ৪/৫ টা স্থাপনার কাজ করেছি। তবে নয়ন লোক ভালো না, সে খুব ভেজাল করেছে। অন্যদের দিয়েও কাজ করাইছে, এখানে অনেক কাজ করা হইছে। শহিদ মিয়া জানায় , জাহিদ হাসান ৪২ লাখ টাকা চুক্তিতে তার মাটির ঘরের বাইরের দেয়াল ঘেঁষে মহাসড়কের পাশে ইটের ওয়াল করে পাকা স্থাপনায় রুপান্তর করা হয়েছে।

এসব করতে জাহিদ তাকে নগদ ২২ লাখ টাকা দিয়েছে।
শহিদের ভাতিজা জাহাঙ্গীর বলেন, চাচার সাথে জাহিদের বাবার নামে চুক্তি হয়।কারন জাহিদ সরকারি চাকরি করে তাই তার নামে কোনো চুক্তি না করে সকল চুক্তি তার বাবার নামেই করে, সে শুধু দেখাশোনা ও টাকা দেয়।

এখানে ৪/৫ জন দালাল আছে সবাই সরকারি চাকরি করে। এছাড়া তাদের সাথে স্থানীয় কয়েকজন আছে যারা তাদের হয়ে কাজ করান।

সরেজমিন দেখা গেছে, শহিদের মাটির দেয়ালের এক পাশে ইটের ওয়াল দিয়ে অন্য দিকের মাটির ওয়ালটি সিমেন্ট ও বালি দিয়ে প্লাস্টার করে মাটির দেয়াল ঢেকে দেয়া হয়েছে। কাঞ্চনের বাড়ির সামনে সবুজ রং করা মাটির দেয়ালে প্লাস্টার এবং আরেকটু সামনে হিন্দু বাড়িতেও এমন চিত্র মিলেছে। বাইপাস মোড় এলাকায় ১০ / ১৫ ফুট গভীর থেকে মাটি বড়াট ও স্থাপনা নির্মাণে চলছে পুড়ো এলাহি কাণ্ড।

এবিষয়ে গাজীপুর সড়ক ভবনের সার্ভেয়ার জাহিদ হাসানের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলতে চাইলে তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন বলে ফোন কেটে দেন, পরে তার সাথে একাধিকবার চেষ্টা করেও আর কথা বলা সম্ভব হয়নি।

এবিষয়ে গাজীপুর সদর ইউএনও অফিসের স্টাফ নয়ন মিয়ার সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে সকল কিছু অস্বীকার করে বলেন, এসবের সাথে তার কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা নেই এবং সে এসবের কিছুই জানেনা। টোকে আত্মীয় থাকার সুবাদে প্রায় যাওয়া হয় বলে দাবি করেন নয়ন।

এবিষয়ে গাজীপুর এলএ শাখার সার্ভেয়ার মনিরুল ইসলাম বলেন, চার ধারায় প্রাথমিক নোটিশ হয়েছে। আট ধারায় আরেটি নোটিশ হবে। কাজ চলমান রয়েছে।

এরচেয়ে বেশি কিছু বলতে নারাজ মনিরুল। এবিষয়ে তার কর্তৃপক্ষ জেলা প্রশাসক এর (ডিসি) সাথে কথা বলার পরামর্শ দিয়ে ফোন করে কেটে দিলেন মনিরুল ইসলাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *