শীর্ষ নিউজ টোয়েন্টিফোরঃ
উত্তরা ব্যাংকের ৪৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ ৩ কর্মচারী কারাগারে।
২৬ জনের নামে ভূয়া ঋণ দেখিয়ে ৪৭ লাখ টাকা লুটপাট মামলায় ঝালকাঠি উত্তরা ব্যাংক শাখার চাকরিচ্যুত ৩ কর্মচারীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ২০-০৩- ২০২২ রবিবার দুপুরে ঝালকাঠির জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. শহিদুল্লাহর আদালতে উক্ত ৩ কর্মচারী আত্মসমার্পন করে।
জামিন আবেদন করলে এ আদেশ দিয়েছেন। কারাগারে পাঠানো উত্তরা ব্যাংকের চাকরিচ্যুত কর্মচারীরা হলেন ব্যবস্থাপক এম এ কুদ্দুস, ঋণ আদায়কারী মো. শাহাবুদ্দিন আহাম্মদ ও সুপারভাইজার মো. আমির হোসেন।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, ঝালকাঠি শহরের কৃষ্ণকাঠি এলাকার বাসস্ট্যান্ডে আলেয়া ইলেকট্রনিকস সেন্টার নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মালিক আবদুল জলিল খান উত্তরা ব্যাংক ঝালকাঠি শাখার লেনদেন করতো।
২০১২ সালে শাখা ব্যবস্থাপক এমএ কুদ্দুস, ঋণ আদায়কারী শাহাবুদ্দিন আহাম্মদ ও সুপারভাইজার আমির হোসেনসহ একটি চক্র আলেয়া ইলেকট্রনিকস সেন্টারের নামে ৫০ লাখ টাকা সিসি (ক্যাশ ক্রেডিট) ঋণ নিয়ে জমি কেনাবেচার ব্যবসা করার প্রলোভন দেখান।
পরবর্তীতে ২০১৩ সালের ২৩ অক্টোবর ওই তিন কর্মকর্তা ব্যবসায়ী জলিল খানের কাছ থেকে বিভিন্ন কাগজপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে নেন। একই বছর ২ ডিসেম্বর জলিল খানের নামে ২৫ লাখ টাকার সিসি ঋণ পাস হয়েছে জানিয়ে তার নামে একটি হিসাব খুলেন।
এসময় ব্যাংকের ম্যানেজার এমএ কুদ্দুস টাকার অঙ্ক ও তারিখ ছাড়া ১০টি চেকের পাতায় জলিল খানের স্বাক্ষর করিয়ে এ চক্রের হাতে রেখে দেন।
১০ ডিসেম্বর জলিল খান তার টাকার প্রয়োজনে উত্তরা ব্যাংকের শাখায় গিয়ে উক্ত সিসি ঋণ থেকে দুই লাখ টাকা উত্তোলন করতে গেলে আত্মসাতের বিষয়টি জানতে পারেন। এমন কি ব্যাংকের উক্ত চক্রটি তাঁর অজান্তেই ৫ ডিসেম্বর তার ঋণ নেয়া ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে খবর পান।
এক পর্যায়ে ব্যাংকের কাগজপত্রে তল্লাশী করিয়ে তিনি দেখেন, তার সিসি ঋণের অনুকূলে ব্যাংকের ম্যানেজার এমএ কুদ্দুসের নামে একটি আমমোক্তারনামা (দলিল) জমা করে রেখেছেন দেখে নির্বাক হয়ে যান।
এ অবস্থায় বিষয়টি জানাজানি হলে জলিল খান ব্যাংকের ম্যানেজার এমএ কুদ্দুস কে চাপ সৃষ্টি করলে শীগ্রই ৪০লাখ টাকা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাকে শান্ত করেন। এভাবে দীর্গ দিন তালবাহানা করেও ব্যাংকের ম্যানেজার ঋণের টাকা পরিশোধ না করে উল্টো জলিল খানকে আরো ২৯টি কৃষিঋণের গ্রান্টার হিসেবে তালিকাভুক্ত করার বিষয় জানতে পারেন।
এহেন পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ি জলিল খান দারুন বিপদগ্রস্থ হয়ে পরেন এবং উত্তরা ব্যাংকে ঋণখেলাপি হিসেবে তালিকাভূক্ত হন। কোন ঋণ না নিয়েও গায়েবী ঋণের ফাঁদে পড়ে তার নিজের বসতঘর নিলামে উঠার উপক্রোম হয়। নিরুপায় হয়ে নিলামের হাত থেকে বসতঘর রক্ষা করতে ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিনি উক্ত ব্যাংক ঋণের সুদ পরিশোধ করতে থাকেন।
এ ছাড়াও উত্তরা ব্যাংক ঝালকাঠি শাখার সাবেক এই তিন কর্মকর্তা ২৬ জন গ্রাহকের নামে ২১ লাখ ৪৩ হাজার টাকা কৃষিঋণ পাস করে জালিয়াতির মাধ্যমে উঠিয়ে আত্মসাৎ করেন। এই সব ঋণ পাসের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী আবদুল জলিলকে কাগজ কলমে গ্রান্টার হিসাবে উল্লেখ করে চরম বিপর্যয়ে ফেলেন ।
এ ঘটনার সমাধানের কথা বলে প্রতারক ৩ সাবেক এ ব্যাংক কর্মচারী ব্যবসায়ী আবদুল জলিল খানের সঙ্গে একাধিক বার বৈঠক করলেও তাকে কোন টাকা না দিয়ে হয়রানি করতে থাকেন। অবশেষে ২০২১ সালের ২৭ মে তিনি ঝালকাঠির জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে উক্ত ৩জনের বিরুদ্ধে নালিশী মামলা দায়ের করেন।
আদালত অভিযোগটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে ঝালকাঠির ওসিকে নির্দেশ দেন।
ঝালকাঠি থানার উপপরিদর্শক গৌতম কুমার ঘোষ তদন্তকালে ঘটনার সত্যতা পেয়ে ২৮ নভেম্বর উক্ত ৩ আসামীর বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। অন্যদিকে মামলার বাদী তার সাথে জালিয়াতী ও প্রতারনা ঘটনায় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছেও লিখিত অভিযোগ করেন।
বিভাগীয় তদন্তে অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ পেয়ে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থাপক এম এ কুদ্দুস, ঋণ আদায়কারী মো. শাহাবুদ্দিন আহাম্মদ ও সুপারভাইজার মো. আমির হোসেনকে চাকরিচ্যুত করেন।
এ অবস্থায় গ্রেপ্তারের হাত থেকে বাঁচতে আসামিরা উচ্চ আদালতে জামিনাবেদন করলে চার সপ্তাহের জন্য অন্তবর্তি কালিন জামিন দিয়ে নিন্মআদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন। ২০ মার্চ রবিবার তারা ঝালকাঠির জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আত্মসমার্পন করে জামিন চেয়ে আবেদন করেন ।
আবেদন নামঞ্জুর করে আদালত কারাগারে পাঠান বলে বাদীর আইনজীবী নাসির উদ্দিন কবীর জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে ভূক্তভুগী ব্যবসায়ী আবদুল জলিল খান জানান, উত্তরা ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ন দায়িত্বে থাকা সাবেক এই তিন কর্মচারী শুধু আমাকেই হয়রানি করেননি, আরো ২৬ জনের নামে কৃষিঋণের টাকা তুলে আত্মসাৎ করেন।
তাঁদের প্রতারণা-জালিয়াতীর শিকার হয়ে আমরা ২৭ জন নিঃস্ব হয়ে গেছি।